বায়োনিক চোখ: অন্ধত্বের সমাধানে বিজ্ঞানের জয়
বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে এমন সব সমাধান উপস্থাপন করছে যা এক সময় ছিল কল্পনার বিষয়। সেইরকম এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হচ্ছে বায়োনিক চোখ প্রযুক্তি (Bionic Eye Technology)। বিজ্ঞানীদের বহু দশকের গবেষণার ফলাফল হিসেবে এটি আজ অন্ধত্বে আক্রান্ত মানুষের জন্য নতুন আশার আলো হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে Boston Retinal Implant Project (BRIP) এই ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বোস্টন রেটিনাল ইমপ্লান্ট প্রজেক্টের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
BRIP প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে ডঃ জোসেফ এফ. রিজ্জো এবং MIT-এর অধ্যাপক জন ওয়ায়াটের নেতৃত্বে। তাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করা যা Retinitis Pigmentosa এবং Age-Related Macular Degeneration (AMD) রোগে আক্রান্তদের দৃষ্টিশক্তি আংশিকভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে।
প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য
- সাবরেটিনাল ইমপ্লান্ট: ডিভাইসটি চোখের পেছনের সাবরেটিনাল অংশে স্থাপন করা হয় এবং এটি সরাসরি রেটিনার স্নায়ু কোষে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়।
- আকার ও গঠন: একটি পেন্সিলের মাথার মতো ছোট, একটি তারের মাধ্যমে মস্তিষ্কে চাক্ষুষ সংকেত প্রেরণ করে।
- টেকসইতা: এটি বায়োলজিক্যাল কম্প্যাটিবল উপাদানে তৈরি এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই প্রযুক্তি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে না পারলেও, ব্যবহারকারীদের আশেপাশের বস্তু, বাধা, চলমান বস্তুর গতি শনাক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে ব্যবহারকারী চলাফেরায় স্বাধীনতা পান এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। ভবিষ্যতে উন্নত সংস্করণে মুখমণ্ডল শনাক্ত করার সক্ষমতা থাকতে পারে।
বর্তমান অবস্থা
এই প্রযুক্তি বর্তমানে human trial পর্যায়ে রয়েছে এবং FDA-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সফলতা পেলে এটি অন্ধত্বে আক্রান্ত মানুষের জন্য এক বৈপ্লবিক সমাধানে পরিণত হবে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ
Pixium Vision তাদের Prima System এর মাধ্যমে dry AMD রোগীদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে এবং ইতিমধ্যেই FDA-এর ব্রেকথ্রু ডিভাইস স্ট্যাটাস পেয়েছে।
বিষয়ভিত্তিক আরও পড়ুন:
- AI প্রযুক্তি ও গোপনীয়তা
- বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তি
- জলবায়ু পরিবর্তন ও চরম বৃষ্টিপাত
- স্কাইপের বিজ্ঞানের অবদান
উপসংহার
বায়োনিক চোখ প্রযুক্তি এখন কল্পনা নয়, বাস্তবতা। এই প্রযুক্তি দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষদের জীবনে আলো ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য, কার্যকর ও সর্বজনগ্রাহ্য হবে।